গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৮ তম রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান। ৮৪ বছর বয়সের জীবনে রাজনীতির নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মী থেকে জাতীয় রাজনীতিবিদ,সংসদ সদস্য,মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আওয়ামী লীগের সবচেয়ে প্রবীণ,অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর,রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জিল্লুর রহমানের রয়েছে অর্ধ শতাব্দীর ও বেশী সময়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। আজ বুধবার (২০ মার্চ) সাবেক এ রাষ্ট্রপতির ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর গ্রামে ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হবার পর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিল্লুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।কারামুক্তির পর দল পুনর্গঠনে আত্ননিয়োগ করেন তিনি।দলের যে কোন বিপদে একজন ত্রাতা হিসেবে সবসময় সাহসী হতে কখনো কুন্ঠাবোধ করেননি । ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় স্ত্রী আইভী রহমানকে হারিয়েও তিনি রাজনীতির মাঠে সত্যের পক্ষে ছিলেন সোচ্ছার। ওয়ান-ইলেভেনের বৈরী পরিস্থিতিতে দলের অনেক প্রবীণ নেতা যখন কারাগারে বা খোলস পাল্টে অন্য অবস্থানে, তখন দলকে বাঁচাতে নবীন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কে নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন প্রবীণ জিল্লুর রহমান।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আইন জারির পর ওই বছর ১৬ জুলাই রাতে মিথ্যা মামলায় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেন। দীর্ঘ ১১ মাস শেখ হাসিনার জেলজীবন এবং চিকিৎসার জন্য আরো প্রায় ৬ মাস দেশের বাইরে অবস্থানকালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কে নিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল অবদান রাখেন।
আইনজীবী হিসেবে জিল্লুর রহমানের একসময় সুনাম ছিল।ষাটের দশকে ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।রাজনীতির কারণে তিনি আইন পেশায় নিয়মিত সময় ও দিতে পারেননি।কিন্তু শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তাকে মুক্ত করার জন্য আলমারিতে তুলে রাখা কোট ও গাউন পড়ে আবারো বীরদর্পে আদালতে লড়েছেন।আদালতে ও রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে তিনি দল মত নির্বিশেষে সবার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে,তাতে আওয়ামী লীগ অবিস্মরণীয় বিজয় লাভ করে। ওই নির্বাচনে তিনি ষষ্ঠবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি নবম জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে জিল্লুর রহমানকে দল থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিতে গিয়ে হয়তো এসব কারণেই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হয়েছিলেন আবেগাপ্লুত।
অহিংস রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ জিল্লুর রহমান ২০১৩ সালের ২০ ই মার্চ, সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জীবনাবসান হয় একজন কিংবদন্তি রাজনীতিবিদের।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!