Ad imageAd image

শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে সফল নারী উদ্যোক্তা: ভৈরবের তাজমিনার পথচলা

কিশোরগঞ্জ পোস্ট
কিশোরগঞ্জ পোস্ট

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একজন সাহসী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত তাজমিনা। তিনি শুধু নিজের ভাগ্য বদলাননি, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন আরও ১৫-২০ জন নারীর জন্য। তাজমিনার সাফল্যের গল্প এখন ভৈরব ও আশেপাশের এলাকার হাজারও নারীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর পরামর্শ নিয়ে অনেক নারীই নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন, বিশেষ করে অনলাইন ও অফলাইনে। তাজমিনা শূন্য থেকে শুরু করে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি স্বপ্ন দেখেন নিজের পণ্যকে দেশব্যাপী একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করার এবং তা বিশ্ববাজারে নিয়ে যাওয়ার। দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে রাখতে চান গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

করোনার ধাক্কা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

তাজমিনা ভৈরবের বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক ছিলেন। সংসার, সন্তান ও শিক্ষকতা নিয়ে তার দিনগুলো ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে জীবনে নেমে আসে ছন্দপতন। দীর্ঘ সময় ধরে ঘরে বসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলেন। এরমধ্যে হঠাৎ ফেসবুকের উই উদ্যোক্তা গ্রুপে চোখ পড়ে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেন থ্রি-পিস নিয়ে অনলাইন ব্যবসা। তবে নিজে হিজাবি হওয়ায় লাইভে এসে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন এবং প্রথম ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হন।

- Advertisement -

নতুন যাত্রার শুরু: হিজাব ব্যবসা

পরবর্তীতে নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে তাজমিনা ঠিক করেন, যেহেতু তিনি নিজে হিজাবি, তাই হিজাব নিয়েই ব্যবসা শুরু করবেন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে শুরু করেন হিজাবের ব্যবসা, যার নাম দেন ‘হিজাবায়া’। অল্প পুঁজি আর নিজস্ব পরিচিতদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই ব্যবসা খুব দ্রুত পরিচিতি লাভ করে। তাজমিনা জানান, প্রথমে ফেসবুক পেইজ ও স্থানীয় গ্রুপগুলোর মাধ্যমে তিনি তার পণ্য বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়তে থাকে এবং সফলতা দেখে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। আজ তার মাসিক বিক্রি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে এবং তিনি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা মুনাফা করছেন।

অফলাইন ব্যবসায়ও সফলতা

- Advertisement -

তাজমিনা বর্তমানে শুধু অনলাইনেই নয়, অফলাইনেও ব্যবসার সম্প্রসারণ করেছেন। নরসিংদীতে তার একটি শোরুম রয়েছে এবং শিগগিরই ভৈরবেও একটি শোরুম খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তার কারখানা ও ব্যবসায় বর্তমানে ১৫ জন নারীর কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে নিজেদের খরচ চালাতে সক্ষম হচ্ছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

- Advertisement -

তাজমিনা তার ‘হিজাবায়া’কে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চান এবং আন্তর্জাতিক মানের একটি ব্র্যান্ডে রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখেন। তিনি আরও বড় কারখানা স্থাপন করতে চান, যেখানে আরও বেশি নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হবে। তাজমিনা বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে আমি বলবো, নিজেকে সফল করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। সাহস করে শুরু করতে হবে, যা আপনি করতে পারেন।”

ক্রেতাদের সন্তুষ্টি

হিজাবায়ার ক্রেতারাও তাজমিনার পণ্যে অত্যন্ত খুশি। নিয়মিত ক্রেতা মাহবুবা ইসলাম সারা এবং সানজিয়া নূসরাত জিনিয়া জানান, হিজাবায়া থেকে মানসম্মত ও সাশ্রয়ী মূল্যের হিজাব কিনতে পেরে তারা সন্তুষ্ট। তারা হিজাব, খিমার ও নেকাবের মতো পণ্যগুলি আস্থার সাথে কিনছেন, যা তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ

তাজমিনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শিক্ষার্থী তাহানা ইসলাম সুহা বলেন, “এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারছি। এমন একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশে কাজ করতে পেরে আমি খুব খুশি।”

তাজমিনার এই সাফল্য শুধু তার নিজের নয়, এটি ভৈরবসহ দেশের নারীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তার এই উদ্যোক্তা জীবন এখন অনেকের জন্য এক আলোকবর্তিকা।

Subscribe

Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!

ফলো করুন

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় খবর
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *