গাল ভর্তি দাঁড়ি, ঠোঁটে ধরা জ্বলন্ত চুরুট, পরনে জলপাই সবুজ সামরিক পোশাক, মাথায় একই রঙের ক্যাপ। মুখে ‘হয় সাম্যবাদ, না হয় মৃত্যু’ স্লোগান। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর কথা উঠলে আপামর মানুষের মনে এই ছবিই ভেসে ওঠে।
তিনি অনুসারীদের কাছে ‘এক মহান নেতা’ আর বিরোধীদের কাছে ‘ফ্যাসিবাদী’।
ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনের গল্পের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে বিপ্লবী আন্দোলন, স্নায়ুযুদ্ধ, পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্ব, পুঁজিবাদ আর কমিউনিজমের সংঘাত।
গেরিলাযুদ্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কিউবার শাসক বাতিস্তাকে উৎখাত করে ১৯৫৯ সালে দেশটির ক্ষমতায় আসেন কাস্ত্রো। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি কিউবা শাসন করেছেন। কোনো পরাশক্তি, কোনো ষড়যন্ত্র বা মৃত্যুভয়ের কাছে মাথানত না করে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকেছেন তিনি।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা দখল করা ফুলগেনসিও বাতিস্তার দুঃশাসন ও নিপীড়নে কিউবার সাধারণ মানুষ তখন অতিষ্ঠ। ওই সময় কিউবা যৌন ব্যবসা, জুয়া আর মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। উচ্ছৃঙ্খল ধনীদের সময় কাটানোর জন্য কিউবা তখন স্বর্গরাজ্য। সে সময়ে বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে ‘দ্য মুভমেন্ট’ নামে একটি আন্দোলন গড়ে তোলেন কাস্ত্রো।
সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালের জুলাইয়ে কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী সান্তিয়াগোর কাছে মোনকাডা সেনা ছাউনিতে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন; কিন্তু সেই আক্রমণটি ব্যর্থ হয়। বহু বিপ্লবী নিহত হন। অনেকে ধরা পড়েন। ধরা পড়া ব্যক্তিদের দলে কাস্ত্রো নিজেও ছিলেন।
কাস্ত্রো একসময় যেন যুক্তরাষ্ট্রের ১ নম্বর শত্রুতে পরিণত হন। তাঁকে একবার-দুবার নয়, ৬৩৮ বার হত্যার চেষ্টা করে মার্কিন গুপ্তঘাতকেরা। কাস্ত্রোকে হত্যাচেষ্টার বেশির ভাগই হয় ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে। এ সময়ে পাঁচ ভাগে সিআইএ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র বিভাগ তাঁকে হত্যার বিভিন্ন চেষ্টা চালায়।
ফেবিয়ান এসকালান্তে কাস্ত্রোর দেহরক্ষী ছিলেন। ৪৯ বছরের শাসনামলের পুরো সময় তিনি কাস্ত্রোর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ৬৩৮ বার কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা করে মার্কিন গুপ্তচরেরা। প্রতিটি ষড়যন্ত্র ছিল অভিনব। এমনকি কাস্ত্রোর চুরুটের মধ্যে পর্যন্ত বিস্ফোরক রেখে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একের পর ষড়যন্ত্রের মুখে ১৯৮৮ সালে কাস্ত্রো ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রই আমাকে কিংবদন্তি করে তুলেছে।’
২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে দেশের শাসনভার তুলে দিয়ে অবসরে যান ফিদেল কাস্ত্রো। তিনি ৪৯ বছর কিউবা শাসন করেছেন। রাজতন্ত্রের বাইরে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো দেশ শাসন করা নেতাদের একজন তিনি।
রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও কিউবাতে ফিদেল কাস্ত্রোর প্রভাব থেকে গেছে, এমন কি বিশ্বেও।
২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর কাস্ত্রো মারা যান। সমাপ্তি ঘটে সফল এক বিপ্লবীর বর্ণিল জীবনের।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!