কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন সহ তিন জনের নামে পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। আজ ২৩ জুন, রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জের আমলী আদালত নং-১ এ এই মামলা দায়ের করা হয়।
আমলী আদালত নং -১ এর ব্যাঞ্চ সহকারী (পেশকার) শিখা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানাকে এফআইআর এর নির্দেশ দেন। পরে পুলিশের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে মামলার প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
পর্ণোগ্রাফি’র এই মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে তাজুল ইসলামের ছেলে মো. নাজমুল হোসেন হিরা কে। মামলার ২য় আসামী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন (৩০) ও ৩য় আসামী মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল (৪৩)। আসামী তিন জনই শহরের বয়লা এলাকার বাসিন্দা।
মামলার প্রধান অভিযুক্ত নাজমুল হোসেন হিরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতির আপন ভাগ্নে। আর অপর দুই অভিযুক্ত মোল্লা সুমন ও মোল্লা বাবুল সহোদর ভাই।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী তরুণী (মামলার বাদী) মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোর গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ভুক্তভোগী তরুণী কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। বাড়ি হাওরে হওয়ায় কলেজে যাতায়াতের সুবিধার্থে কলেজের কাছে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বাসা থেকে কলেজে যাওয়া-আসার পথে সভাপতির ভাগ্নে, মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিরা পথরোধ করে প্রায় সময় প্রেম নিবেদন করতো। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হিরা তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোল্লা সুমনের ভয় দেখিয়ে কলেজে যাওয়া-আসার পথ বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দেয়। এরপর হিরার সঙ্গে একসময় ভুক্তভোগী তরুণীর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে, এবং বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে তা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত পৌঁছায়। যা অভিযুক্ত হিরা তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্থির চিত্র ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হবার পর ভুক্তভোগী তরুণী মামলায় অভিযুক্ত অন্য দুইজনকে ফোনে বিষয়টি জানালে তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তাকে কিশোরগঞ্জ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তবে নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখে।
মামলার এজাহার থেকে আরো জানা যায়, একপর্যায়ে ভুক্তভোগী তরুণী একটা বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে সিরাজ কাজির মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৮ জুন নাজমুলের বিয়ের নিবন্ধন করা হয়। কিন্তু বিয়ে নিবন্ধনের কোনো অনুলিপি তাঁকে দেওয়া হয়নি। এদিকে তরুণী জানতে পারেন নাজমুল হোসেন আগেও বিয়ে করেছেন এবং তাঁর দুটি সন্তান আছে। বিষয়টি জানার পর ওই তরুণী নাজমুলকে মৌখিকভাবে তালাক দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল তাঁর মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে দুইবার ওই তরুণীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আর এ ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি মোল্লা সুমন ও তাঁর বড় ভাই মোল্লা বাবুলও ওই তরুণীকে ভয়ভীতি দেখান।
পরে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ওই তরুণীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুটি দামি মুঠোফোন কেনেন। মোশারফ হোসেনও একই কৌশলে ওই তরুণীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল নাজমুল আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করেন। এসব ঘটনায় তাঁদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ধারণকৃত সব ভিডিও, স্থির চিত্র ও অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে নিরুপায় হয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
ভুক্তভোগী তরুণীকে হুমকি ও তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ আমি যত দূর জানি আমার ভাগ্নে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছে। বিয়ের সব ডকুমেন্টও রয়েছে। তবে এ ঘটনায় আমার বা আমার বড় ভাইয়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি মিথ্যা অভিযোগ এনে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ভাগ্নের ঘটনার সঙ্গে আমাদের জড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ভাগ্নের একটি ভিডিও কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল এবং এর প্রেক্ষিতে সে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাও করেছিল।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ শুনেছি। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
