কিশোরগঞ্জে পাকুন্দিয়া থানায় প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গার্মেন্টস কর্মী (১৮)। এই ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে।
গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে ওই গার্মেন্টস কর্মীকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই তরুণী গাজীপুরের এক গার্মেন্টসে কাজ করতেন।
আটককৃত তিনজন আসামি হলেন পাকুন্দিয়া উপজেলায় বীর পাকুন্দিয়া এলাকায় আলী আকবরের ছেলে মো. কাউসার আহম্মেদ (২৪), একই এলাকার খসরু মিয়ার ছেলে জুবায়েদ হাসান শুভ (১৮) ও চর পাকুন্দিয়া গ্রামের মুক্তার উদ্দিনের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন রাজু (২৪)।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু কিশোরগঞ্জ পোস্ট কে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী গার্মেন্টসকর্মী ও পুলিশ জানায়, পাকুন্দিয়ার বাসিন্দা ভুক্তভোগী তরুণী জীবিকার তাগিদে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। চাকরি করার সময় পাকুন্দিয়া উপজেলার সাব্বির হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বন্ধুত্ব হয়। পরে কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক সময় তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ের করবে। গতকাল বিয়ের কথা বলার জন্য ওই তরুণী তাঁর বাড়িতে আসে। ওই দিন বিকেলেই দেখা করে প্রেমিক সাব্বিরের সঙ্গে। পরে প্রেমিক সাব্বির ওই তরুণী এবং তাঁর বন্ধু আশরাফকে নিয়ে অটোচালক হুমায়ুন কবিরের অটোরিকশা দিয়ে ঘুরতে যায়।
ঘুরতে ঘুরতে যখন তারা উপজেলার তারাকান্দি বাজারে পৌঁছায় তখন কাউসার, জুবায়েদ, মেহেদী হাসান, হৃদয়, বাবু, তোফাজ্জল ও ইয়াসিন অটোরিকশাটি থামিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে গার্মেন্টস কর্মীকে তারাকান্দি ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে নিয়ে আসে। পরে গার্মেন্টসকর্মীর প্রেমিকের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করলে, প্রেমিক ব্যর্থ হয়ে টাকা না দিলে ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কর্মী এবং তাদের সঙ্গে থাকা অটোরিক্সাটি ছাড়বে না বলে জানায়।
এই দিকে অভিযুক্ত সাব্বির, হুমায়ুন ও ভুক্তভোগীর বন্ধু আশরাফকে মাদ্রাসার মাঠে ভয় দেখিয়ে দাঁড় করিয়ে মাদ্রাসার পাশের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে নিয়ে যায় ওই গার্মেন্টসকর্মীকে। ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কর্মীকে প্রথমে হৃদয়, পরে মেহেদী, বাবু, কাউসার এবং সর্বশেষে আসামি জোবায়েদ হোসেন শুভসহ পাঁচজন ধর্ষণ করে।
এই ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় মাদ্রাসার মাঠে থাকা সাব্বিরের বন্ধু আশরাফ টাকা সংগ্রহের কথা বলে কৌশলে থানায় এসে পুলিশকে জানায় তাদের অটোরিকশা আটকে টাকা দাবি করছে কয়েকজন তরুণ। এই সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ। সেখানে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ গিয়ে অটোরিকশাটি জব্দ করা অবস্থায় পায়। পরে পুলিশ জানতে পারে অটো রিক্সাতেতে আসা এক গার্মেন্টস কর্মীকে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ পরিত্যক্ত ঘরটিতে গিয়ে দেখে ওই গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের অবস্থান বুঝতেই তারা সটকে পরে। তবে কাউসার ও জুবায়েদকে ঘর থেকে পালানোর সময় আটক করে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ। এই অভিযান চালিয়ে সহযোগী তোফাজ্জলকেও গ্রেপ্তার করে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ। এই সময় ঘটনার ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেন তারা। এই ঘটনার পর-পরই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই গার্মেন্টস কর্মীকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায় পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ। গার্মেন্টস কর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ রবিবার (২৮ জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতে নারী, শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ।
ওই গার্মেন্টস কর্মীর প্রেমিক সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমরা বিয়ে করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই কারণেই সে (গার্মেন্টস কর্মী) আসে পাকুন্দিয়ায়। আমি আমার ফুফুর বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমার ফুফু রাজি হলেই আমার পরিবার বিয়েতে সম্মতি দিত। তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার সময় এই কথাগুলো বলছিলাম। হঠাৎ কাউসার, জুবায়েদ, মেহেদী, হৃদয়, বাবু, তোফাজ্জল ও ইয়াসিন মিলে আমাদের অটোরিকশা আটকিয়ে আমাদেরকে মাদ্রাসার মাঠে নিয়ে যায়। পরে টাকা দাবি করে। ওই পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে গিয়ে তারা ধর্ষণ করে।’
সাব্বিরের বন্ধু আশরাফ বলেন, ‘তারা যে টাকা দাবি করছে সে টাকা আমাদের কাছে নাই। আমরা কোথা থেকে এনে এতো টাকা দিব। পরে মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি আসে পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে আমাদের অটোরিকশাটি উদ্ধার করে দিবে তাই পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের কাছে চলে যাই। কিন্তু তারা এমন ঘটনা ঘটাবে তা একবারও ভাবিনি।’
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, ‘আটক তিন আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আজ রবিবার দুপুরে আসামিদের কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
Related
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!