fbpx
Ad imageAd image

কবীর সুমন : ধ্রুপদী সেকাল, মৌলিক একাল

কবীর সুমন, জন্মদিন, সাবিনা ইয়াসমিন

কিশোরগঞ্জ পোস্ট
কিশোরগঞ্জ পোস্ট

আশির দশকের শেষ থেকে নব্বই দশকের দিকে বাংলা গান যখন তার গতি ও ছন্দ হারিয়ে শ্বাসরুদ্ধ  অবস্থায়, ঠিক তখনি মঞ্চে বাংলা গানের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন এক ক্ষ্যাপাটে তরুণ । বাঙালির বাংলা গানের তৃষ্ণা মেটাতে, শুরু করলেন নতুন ধাঁচের গান, নতুন স্বাদের গান। তার জীবনমুখী গানে বাংলা গান, আবারো ফিরে পেল প্রাণ। শুধুমাত্র একটা গিটার নিয়ে বুক চিতিয়ে বাংলা গান গাওয়া এই ক্ষ্যাপাটে তরুণের নাম কবীর সুমন। আজ ১৬ মার্চ, তার জন্মদিন। সময়ের স্রোতে জীবনের ৭৪ বসন্ত পেরিয়ে ৭৫ এ পা রেখেছেন তিনি।

দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় কবীর সুমন জন্মগ্রহণ করেন কাঁটাতাড়ের ঐপাড়ে, ওড়িশ্যার কটকে। বাঙালি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা কবীর সুমনের পূর্ব নাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। তার পিতা সুরিন্দ্রনাথ এবং মাতা উমা চট্টোপাধ্যায়।

খুব অল্প বয়সেই বাবার তত্ত্বাবধানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেওয়া কবীর সুমনের গায়ক সত্তা ছাড়াও রয়েছে অনেক পরিচয়। একজন গীতিকার, অভিনেতা, বেতার সাংবাদিক, গদ্যকার এবং রাজনীতিবীদ। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তার এখন বড় পরিচয়, বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি। যাঁর গানের মধ্যে মিশে আছে ধ্রুপদী সেকাল, মৌলিক একাল।

কবীর সুমন প্রথম জীবনে রেডিও জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন ডয়েচ ভেলে-তে, কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। সংক্ষিপ্তভাবে কাজ করেছেন ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতেও।

- Advertisement -

তবে ১৯৯২ সালের দিকে, সবাই যখন গতানুগতিক ধারার গান শুনে অভ্যস্ত, ঠিক তখনই কবীর সুমন হাজির হন আধুনিকতার ছোঁয়া আর জীবনধর্মী কথা দিয়ে তৈরি এক নতুন ধারার গান নিয়ে। অন্যান্য শিল্পীরা যেখানে অন্যের লেখা গান ও সুরে গান গাইতেন, সেখানে সুমন নিজের লেখা গান নিজের করা সুরে গাইতেন।

আগে তিনি রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কাজ করলেও ৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ একক গানের মধ্য দিয়ে সংগীত অনুরাগীদের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। সুমন মূলত ভক্তদের কাছে পৌঁছতে পেরেছেন তার ব্যতিক্রমী জীবনমুখী গানের জন্যই। তার গানে নেই কোনো ইন্সট্রুমেন্টের বাড়াবাড়ি বা প্রযুক্তির কারসাজি । অসম্ভব সুন্দর কথায় ভরপুর প্রত্যেকটা গানই শ্রোতাকে তার বিস্ময়ের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সুমন নিজেই অবশ্য একবার বলেছিলেন, ‘গান লেখার জন্য কল্পনা করার প্রয়োজন নেই, তোমার আশে পাশের পরিবেশ নিয়েই গান ধরো। আত্ম শুদ্ধির স্বাদ পাবে।’ এই জন্যই হয়তো সুমনকে বলা হয়ে থাকে নাগরিক কবিয়াল।

সুমনের স্বরচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। সঙ্গীত রচনা, সুরারোপ, সঙ্গীতায়োজন ও কণ্ঠদানের পাশাপাশি গদ্যরচনায়ও তিনি স্বকীয় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। রচনা করেছেন একাধিক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোট গল্প। কবীর সুমনের সৃষ্ট গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গানওয়ালা, তোমাকে চাই, তুমি ছিলে, হাল ছেড়ো না বন্ধু, অভিবাদন, খোদার কসম জান, জাতিস্মর, কখনো সময় আসে, সাড়া দাও ইত্যাদি।

লাইভ কনসার্টে কবীর সুমন

গানের অ্যালবাম ছাড়াও সুমন বেশি পরিচিত হন তার কনসার্টগুলোয়। গিটার, পিয়ানো, মাউথঅর্গান বাজিয়ে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের সঙ্গে কথোপকথনে সুমনের জুড়ি মেলা ভার।

সঙ্গীত পরিচালনাতেও সমান দক্ষ ছিলেন কবীর সুমন। সৃজিত মুখার্জির ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনার জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

- Advertisement -

সঙ্গীতে তার অবদানসমূহের পাশাপাশি, সুমন সবসময় বলিষ্ঠ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করেন। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময়, প্রতিবাদে তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে গান রচনা করেছিলেন।২০০৬ থেকে, সুমন নন্দীগ্রামের জমির লড়াইতে সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে এই লড়াই এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যার নেতৃত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের জমি বিষয়ে তার গানের দুটি অ্যালবাম, নন্দীগ্রাম এবং প্রতিরোধ। তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর থেকে ২০০৯ এর সাধারণ নির্বাচনের জন্য তাঁকে মনোনীত করেছিল এবং নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ভারতের কম্যুনিষ্ট(মার্ক্সবাদী) দলের সুজন চক্রবর্তী ৫৪, ০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

কবীর সুমন প্রথম বারের মত ঢাকায় আসেন ১৯৯৬ সালে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরিতে তহবিল সংগ্রহের জন্য আয়োজিত কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তখন ঢাকায় এসে বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে যান । এরপর থেকে বাংলাদেশের প্রতি সুমনের প্রাণের টান ফিকে হয়ে যায়নি কখনো।

সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে কবীর সুমন হয়ে বিয়ে করেছেন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে। কথা বলেছেন  শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে শুরু করে ফেলানী-হত্যার বিচার নিয়ে, রাজাকার বিরোধী আন্দোলনের সময় খুন হওয়া ব্লগার রাজীব হত্যার বিচার নিয়ে। নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে গান করাসহ বাংলাদেশের বহু প্রসঙ্গ নিয়েই সুমন গান করেছেন। জীবনের শেষ সময়টা বাংলাদেশে কাটানোর ইচ্ছাও পোষণ করেছেন বহুবার। এ থেকেই বুজা যায় বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা কতটুকু!

- Advertisement -

শুভ জন্মদিন কবীর সুমন, বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি।

Subscribe

Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!

ফলো করুন

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় খবর
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *