গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি-মুক্তি বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা চালাতে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে নবমবারের মতো ওই অঞ্চল সফরে গেলেন ব্লিঙ্কেন।
এই সফরের কিছুদিন আগেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার বৈরিতা ও ব্যবধান দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ীভাবে দূর করার লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুটা পরিবর্তিত নমনীয় এক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন।
এর আগে, গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় গাজাযুদ্ধ নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হয়। এরপর থেকেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছে।
যদিও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে হামাস।
হামাস জোর দিয়ে বলেছে যে, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে কি-না, সেটি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সব মিলিয়ে যুদ্ধবিরতির যে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সেটি একটি ‘ভ্রম’ বলে মন্তব্য করেছে হামাস।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সোমবার ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েলের উপর আবারও চাপ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেদিক থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে যে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই হয়ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কার্যকর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে। যদিও ইসরায়েল ও হামাস, কোনো পক্ষই তেমন কিছুরই আভাস দেয়নি। উল্টো, যুদ্ধবিরতি না হওয়ার কারণ হিসেবে এখনও তারা একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে।
রোববার বিষয়টি হামাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার” লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন।
এক্ষেত্রে “নতুন নতুন শর্ত ও দাবি” তুলে ধরার মাধ্যমে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে “বাধা সৃষ্টি” করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কাজেই যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী যেসব পক্ষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সেটি নস্যাৎ করার জন্য জন্য ইসরায়েলই “সম্পূর্ণরূপে দায়ী” বলে মন্তব্য করেছে হামাস।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন যে, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। “আমরা আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি,” বলেছিলেন বাইডেন।
যদিও গত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নানা আলোচনা শোনা গেছে। বেশ কয়েকবার এ নিয়ে আশার আলো দেখা গেছে বলা হলেও পরবর্তীতে তেমন কিছুই ঘটতে দেখা যায়নি।
তখন ইসরায়েল জানায়, তাদের শতাধিক নাগরিক এখনও হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে। ওইসব জিন্মিদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন ইতোমধ্যেই মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, গত মে মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাটি তুলে ধরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
সেখানে বলা হয়েছে যে, মোট তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে, যার প্রথম ধাপ শুরু হবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে। ওই সময়ে গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সরিয়ে নেয়া হবে। দেওয়া হবে মানবিক সহায়তা।
একই সঙ্গে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যে বন্দী এবং জিম্মি বিনিময় হবে বলেও পরিকল্পনায় বলা হয়। যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাবে ইসরায়েল রাজি হবে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদ ব্যক্ত করছিল। কিন্তু পরে দেখা যায়, ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!