fbpx
Ad imageAd image

৫০ টাকার নিচে নেই সবজি, গরিবের মাছও নাগালের বাইরে, মানুষ খাবে কি?

কিশোরগঞ্জ পোস্ট
কিশোরগঞ্জ পোস্ট
৫০ টাকার নিচে নেই সবজি, গরিবের মাছও নাগালের বাইরে, মানুষ খাবে কি?

শিম, কপি ও বেগুনসহ শীতকালীন নানা সবজিতে ভরপুর বাজার। অবশ্য দাম দেখে কোনোভাবেই বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এটা সবজির মৌসুম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুলা, পেঁপে ও শালগম ছাড়া কোনো সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে নেই। অন্যান্য দিনে মুলা কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবারের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

অন্যদিকে গরিবের মাছ খ্যাত পাঙাশ ও তেলাপিয়া এবং চাষের কইসহ সব ধরনের মাছের বাজারই ঊর্ধ্বমুখী। মধ্য ও নিম্নবিত্তরা আগে এসব মাছ কিনতে কিছুটা সাহস দেখালেও এখন দাম শুনেই মুখ লুকিয়ে বাজার ছাড়ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই। এদিকে, বাড়তি দাম নিয়ে বিক্রেতারাও যেন অনেকটা অসহায়। তারা বলছেন, এই সময়ে মাছের দাম কম থাকার কথা থাকলেও সব ধরনের মাছের দামই তুলনামূলক বেশি।

শুক্রবার একাধিক বাজার ঘুরে সবজির দামের এই চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপিও। এছাড়া, প্রকারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়।

- Advertisement -

তাছাড়া, বাজারে রান্নায় সবচেয়ে ব্যবহার্য আলু বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। তুলনামূলক সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুলা ও পেঁপে ৪০ টাকায়। আর বরবটি ১২০ টাকা, শালগম ৪০, লাউ ৫০-৮০ টাকা প্রতি পিস, শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে।

আজকের বাজারে অন্যান্য দিনের তুলনায় শাক কম দেখা গেছে, ফলেও দামও তুলনামূলক কিছুটা বেশি। এক আঁটি লাল শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে, যা অন্যান্য সময়ে ১০-১৫ টাকা করেই পাওয়া যায়। এছাড়া, লাউ শাক ৫০ টাকা, পালং শাক ২০ টাকা ও ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটি করে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার এলেই শাক-সবজির দাম বেড়ে যায়। বাজারে সবজির দাম শুনলেই মাথা গরম হয়ে যায়। এখন শীতের প্রতিটি সবজিই বাজারে চলে এসেছে, তারপরও দাম কমছে না। যা দাম চাচ্ছে তাই দিতে হবে, না হয় সামনে দাঁড়ানোরও সুযোগ নেই। কী আর করা, বাধ্য হয়েই আমাদেরকে কিনতে হচ্ছে।

জহিরুল ইসলাম নামের আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, শুক্রবারে ছুটি থাকে, তাই সপ্তাহের বাজারটা এই দিনে করে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন দেখছি ব্যবসায়ীরাও এই দিনটাকে ঘিরে নতুন করে ব্যবসার ফন্দি এঁটেছে। আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় সব কিছুর দাম বেশি।

তিনি বলেন, বাজারগুলোতে মনিটরিং করতে কোনোদিন দেখিনি। বাজার কমিটিও থাকে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার ধান্দায়। সরকারও যেন সিন্ডিকেটের কাছে অনেকটা অসহায়। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে?

- Advertisement -

এদিকে, বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই দিন বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির পরিমাণ কম, তাই বেশি দামেই আমাদের কিনে আনতে হয়েছে।

বিক্রেতা রাকিব মিয়া বলেন, বাজারে শীতের সবজি পর্যাপ্ত আছে, কিন্তু দামটা অন্যান্য সময়ের তুলনামূলক একটু বেশি। আবার দাম বেশি হলেও তুলনামূলক চাহিদাও অনেক বেশি। আপনারা বলছেন দাম বেশি, তারপরও মানুষ এতো পরিমাণ নিচ্ছে, যা দেখে অবাক হওয়ার মতো।

তিনি বলেন, শুক্রবারে অধিকাংশ মানুষ সাপ্তাহিক বাজার করে ফেলে। যে কারণে চাহিদা থাকে অনেক বেশি। অন্য দিনগুলোতে সারা দিনে যা বিক্রি করি, শুক্রবার এলে সকালের দিকেই সেই পরিমাণ বিক্রি হয়ে যায়। তবে দামটা যদি আর একটু কম থাকত, তাহলে হয়ত বিক্রেতা আরও বেশি হতো।

- Advertisement -

বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে সবজি বিক্রেতা মো. কবির হোসেন বলেন, গত দুই দিন বৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক কৃষকের সবজি নষ্ট হয়েছে, তাই সব সবজির দামটা একটু বেড়ে গেছে। আমরা যে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দামে বিক্রি করি, বিষয়টা এ রকম নয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই দামটা একটু বাড়িয়ে রাখতে হয়।

তেলাপিয়া-পাঙাশও চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, ছোট সাইজের শোল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা ও আর মাঝারি সাইজের শোল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরপুঁটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।

এছাড়া, বড় সাইজের আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজিতে। প্রতি কেজি চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ ২৬০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা ও কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া, টাকি মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মলা মাছ কেজি প্রতি ৪০০ টাকা ও পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজার করতে আসা কামরুল ইসলাম ইসলাম নামের এক চাকরিজীবী বলেন, বাজারে এলে অতিরিক্ত দামের কারণে কোনো মাছই কেনা যায় না। গরিবের মাছ তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কইয়ের দামও চড়া। আর অন্য কোনো মাছ কেনার কথা ভাবাই যায় না। এখন পাঙাশ মাছও ২২০/২৪০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়।

তিনি বলেন, বাজারে এলেই খুব মেজাজ খারাপ হয়। কিন্তু কাকে কী বলব? কিছুই বলার নেই। একটু দামাদামিরও সুযোগ থাকে না। বিক্রেতার এক কথা, নিলে নেন, না নিলে ভাগেন। আমরা আসলে যাব কোথায়?

মাসুদুর রহমান নামের এক কর্মী বলেন, ইদানীং বাড়তি দামের কারণে বাজারে এলে মাছ কিনতে পারি না। বাজারে সবচেয়ে কম দামের মাছও এখন বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। দর-দাম করে সবশেষে তেলাপিয়া মাছ কিনলাম… তাও ২২০ টাকা কেজি দরে। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষেরা কোনো মাছই এখন সেভাবে কিনতে পারছি না।

মাছের দাম প্রসঙ্গে মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা খলিল মিয়া বলেন, এই সপ্তাহে তুলনামূলক মাছের দাম অনেকটাই বেশি। এর কারণ আমরা বলতে পারব না, আড়ৎদাররাই ভালো বলতে পারবে। পুরো সপ্তাহেই মাছের দাম বেশি গেছে। শীতের মৌসুম হিসেবে এই সময়ে মাছের দাম কম থাকার কথা, কিন্তু উল্টো দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।

তিনি বলেন, আমরা কম দামে কিনতে পারি না, বেচব কীভাবে? পাবদা মাছ কেনা পড়েছে ৩৮০ টাকা করে, বিক্রি করছি ৪০০ টাকা করে। খরচ বাদ দিলে ২০ টাকাও লাভ থাকে না। আমাদেরও তো বিক্রি করতে হবে, ঢাকায় থাকি, স্ত্রী-সন্তান আছে, বাসা ভাড়া দিতে হয়, বাকি সব তো কিনেই খেতে হয়। আমরাও যে খুব বেশি ভালো আছি এ রকমটা নয়।

Subscribe

Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!

ফলো করুন

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় খবর
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *