Ad imageAd image

স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী: শহীদ আব্দুল হান্নান খান ও তাঁর পরিবারের মানবিক সংগ্রাম

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক

আব্দুল হান্নান খান ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ডাক্তার ও মেয়েকে বিমান বাহিনীর অফিসার বানানো এবং তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের আগেই তাঁকে চলে যেতে হলো অচেনা এক পৃথিবীতে। তাঁর অকাল প্রয়াণে ভেঙে পড়ল একটি সুখী পরিবার।

৫ আগস্ট, ২০২৪, পুলিশের গুলিতে শহীদ হন হান্নান। গুলি লাগার পর শেষ কথা বলেছিলেন তাঁর ছেলে সিফাতকে, “সিফাত, গুলি ম্যারে দেছেরে।” মুহূর্তের মধ্যে তাঁর জীবনের সব স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও পরিবারের সুখ যেন তছনছ হয়ে যায়।

হান্নান পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরের ইদ্রাকপুর গ্রামের মৃত শহীদুর রহমান ও মৃত সাজেদা বেগমের সন্তান। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পরিবারে স্ত্রী শিরিন আকতার, একমাত্র ছেলে সাইফ আহমেদ খান (সিফাত) এবং মেয়ে সায়মা আকতার সিঁথি ছিলেন। সুখী পরিবারে সবার আশা ছিল, একদিন সিফাত ডাক্তার এবং সিঁথি বিমান বাহিনীর অফিসার হবে।

গত ৫ আগস্ট, কর্মস্থল ঢাকা সেনানিবাস থেকে ছেলের সাথে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন হান্নান। কাফরুল থানার সামনে পুলিশের কাছে পৌঁছানোর পর আচমকা তাঁদের পথরোধ করে পুলিশ। ১৫-২০ জন পুলিশ সদস্যের কাছে পরিচয়পত্র দেখান হান্নান। ঠিক তখনই পুলিশ গুলি ছোঁড়ে, এবং হান্নান গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সিফাত মোটরসাইকেল থেকে নেমে প্রাণে বাঁচেন, কিন্তু বাবাকে আর বাঁচাতে পারেননি।

- Advertisement -
আব্দুল হান্নানের আইডি কার্ড

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সিফাতের কান্না জড়িত কণ্ঠে বলা, “আমরা আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন আমরা অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছি। বাবার শহিদী মর্যাদা ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

হান্নানের স্ত্রী শিরিন আকতার জানান, “আমি ফোনে জানতে পারি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। হাসপাতাল এসে দেখি, আমার স্বামী নেই। তিনি ছিলেন অসাধারণ মানুষ, গরীবদের সাহায্য করতেন। এখন আমি ও আমার সন্তানদের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন।”

শহিদ হান্নানের ভাই মো. রোকনুজ্জামান লিটন বলেন, “আমার ভাই সৎ ও পরোপকারী মানুষ ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর স্বপ্ন ছিল সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এখন আমাদের সকলের উচিত এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।”

পরিবারের সাথে আব্দুল হান্নান

শহীদ হান্নানের স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য দরকার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আর্থিক সহায়তা। তাঁর দুই সন্তানের ভবিষ্যত অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার আগে, আমাদের সক্রিয়ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, হান্নানের আত্মা যেন শান্তি পায়, তার জন্য প্রয়োজন সঠিক বিচার।

এখন সময় এসেছে, আমরা সবাই এক হয়ে এই পরিবারের পাশে দাঁড়াবো এবং হান্নানের সংগ্রামের আলোকে এগিয়ে যাবো।

- Advertisement -

Subscribe

Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!

ফলো করুন

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন
জনপ্রিয় খবর
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *