৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বব্যাপী নারীরা তাদের একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদ্যাপন করে। যেহেতু বর্তমান বিশ্ব এখনো নারীদের জন্য নিরাপদ নয়, সেহেতু নারীর সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার জন্য এই নারী দিবসের প্রয়োজন ও গুরুত্ব রয়েছে।
এইতো বছর দেড়েক আগে, ঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে তেহরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার তাদের দেশে নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা ও চাকরি নিষিদ্ধ করে; এমনকি বাড়ির বাইরে যেতে হলেও বৈধ পুরুষ সঙ্গী নিয়ে যাওয়ার নিয়ম জারি করে।
নিজ নিজ দেশে যুদ্ধ, সহিংসতা এবং সরকারি নীতি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান, ইরান, ইউক্রেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নারীরা এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। শুধুই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই নারীরা সংগ্রাম করছে এমন নয়, পশ্চিমের অনেক দেশেও নারীরা অধিকারের জন্য এখনও লড়ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অপুষ্টি, দারিদ্র্য এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলো এই নারী।
এসব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আগামী দিনগুলোতে নারীর সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার জন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে এই নারী দিবসের প্রয়োজন এখনও রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বের নারী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
নারী দিবসের ধারণা অবশ্য শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভুত হয়। ১৯০৮ সালে কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং ভোটাধিকারের দাবিতে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল প্রায় ১৫,০০০ নারী। মূলত এই আন্দোলনের মাঝেই লুকিয়ে ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবস পালনের বীজ।
এই আন্দোলনের এক বছর পর আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি সর্বপ্রথম জাতীয় নারী দিবস ঘোষণা করে। তবে জাতীয় পর্যায় থেকে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পরিণত করার প্রথম উদ্যোগটি নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট ও নারী অধিকার কর্মী ক্লারা জেটকিন। ১৯১০ সালে তিনি কোপেনহেগেনে কর্মজীবী নারীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নারী দিবস নামক ধারণার প্রস্তাব দেন। সেই সম্মেলনে উপস্থিত থাকা ১৭ দেশের ১০০ জন নারীর সকলেই তার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে।
এরপরের বছর, অর্থাৎ ১৯১১ সালে ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি যখন ক্লারা উত্থাপন করেন, তখন তিনি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি।
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট করা যায়নি বলেই উল্লেখ রয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। একই বছর রুশ নারীরা ‘রুটি এবং শান্তি’-এর দাবিতে তৎকালীন জারের (রাশিয়ার সম্রাট) বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করেন; এর ৪ দিনের মাথায় গদি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল জার এবং জারের গদিতে বসা অস্থায়ী সরকার তখন নারীদের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার দিয়েছিলেন।
সে সময়ে রাশিয়ায় প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, নারীদের ধর্মঘট শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, রোববার। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই দিনটি ছিল ৮ মার্চ; পরবর্তীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ মার্চকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১১ সালে পালিত হয় দিনটির শতবর্ষ। প্রতি বছর একটু একটু করে এগিয়ে ২০২৪ সালে আজ আমরা পালন করছি ১১৩ তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নারী দিবস পালন করা হয়। আর এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, “নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ – এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।”
অর্থাৎ, নারীদের সমান অধিকার, সমান সুযোগ নিশ্চিত করে এগিয়ে নিতে এবং তাদের উপর বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে এবারের এই নারী দিবস উদযাপন।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!