যুক্তরাষ্ট্রে গরুর পাস্তুরিত দুধে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছে, একটি গবেষণার সময় নমুনা হিসেবে নেওয়া গরুর দুধে ভাইরাসের অবশিষ্টাংশ পেয়েছে তারা। এতে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে মানুষের জন্য ঝুঁকির মাত্রা খুব সামান্য।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গবাদিপশুর মধ্যে হাইলি প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইপিএআই) বা বার্ড ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসার মধ্য দিয়ে একজন মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর উপসর্গগুলো মৃদু।
এইচপিএআই-এর এইচ৫এন১ ধরনে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ হাঁস-মুরগি মারা গেলেও, আক্রান্ত গরুকে গুরুতর অসুস্থ হতে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন বলেছে, জাতীয় জরিপের সময় তারা আক্রান্ত প্রাণীর দুধে ভাইরাস শনাক্ত করেছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এবং প্রক্রিয়াকরণের শেষেও এমন অবস্থা দেখা গেছে।
পাস্তুরিত দুধের নমুনাগুলো নিয়ে একটি কোয়ান্টিটেটিভ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (কিউপিসিআর) পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাস্তুরিতকরণ প্রক্রিয়ার সময় উত্তাপে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। নমুনায় প্যাথোজেনের জেনেটিক উপাদানের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত হয়েছে শুধু।
এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়ালে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লিয়ন হাসপাতালের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ব্রুনো লিনা বলেন, ‘গরুর দুধে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি আসলেই কি উদ্বেগের? না, যদিও অন্য কোনো প্রাণীর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ভালো খবর নয়। প্রাণী ও মানুষের নিয়মিত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। তবে চার-মাস আগের তুলনায় বড় ধরনের মহামারি ঝুঁকি তৈরির মতো বড় ধরনের কোনো মিউটেশন আমরা ভাইরাসটিতে দেখছি না।’
এপ্রিলের শুরুর দিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, টেক্সাসের একটি ডেইরি ফার্মে কর্মরত এক ব্যক্তি গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসার পর বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেরে উঠছেন। তাঁর সামান্য উপসর্গ ছিল। একটি গরুর সরাসরি সংস্পর্শে আসার পর তাঁর একটি চোখে সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।
ফ্রান্সের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ব্রুনো লিনা বলেন, ‘আমরা জানি এ ভাইরাস মানবদেহের সুনির্দিষ্ট দুটি জায়গায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাহলো চোখে হালকা ধরনের সংক্রমণ এবং ফুসফুসের গভীরতম অংশ পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ।’
আক্রান্তদের মধ্য যাঁদের পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ হয়, তাঁদের অবস্থা গুরুতর হতে দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২০ বছরে এইচ৫এন১ ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৯০০ মধ্যে যাঁদের পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ হয়েছে, তাঁদের অর্ধেকই মারা গেছেন।
তবে পাস্তুরিত দুধে এ ভাইরাস কণার উপস্থিতি পাওয়া গেলেও এ দুধ পান করার কারণে ঝুঁকির মাত্রা প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞ লিনা বলেন, ‘পাস্তুরিত করা হলে ভাইরাসটির উপস্থিতিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব না হলেও এটি ধ্বংস হয়ে যায়।’
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!