যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি ৪৩ দিন। কিন্তু এরই মধ্যে জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই। দেশটির ভোটারদের মধ্যে কেউ কেউ হাড্ডাহাড্ডি এ লড়াইয়ে তাঁদের মূল্যবান ভোট দিতে শুরু করেছেন। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে গত শুক্রবার আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ভার্জিনিয়া, সাউথ ডাকোটা ও মিনেসোটার ভোটাররা সশরীর গিয়ে ভোট দিচ্ছেন।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের একটি বুথে গত শুক্রবার সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ভোটারদের সারি দেখা যায়। সেখানে ভোট দিতে আসা ৫৬ বছর বয়সী টম কিলকেনি বলেন, ‘আপনারা অনুভব করুন যে আমরা ভোট দেওয়া প্রক্রিয়ার অংশ।’ টমের স্ত্রী ৫৫ বছর বয়সী মিশেল বলেন, আগেভাগে ভোট দিয়ে বন্ধু ও প্রতিবেশীদের কাছে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরে তিনি খুশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিটিতে নিজস্ব ভোটিং পদ্ধতি রয়েছে। পোস্টের মাধ্যমে বা সশরীর গিয়ে আগাম ভোট, নির্বাচনের দিন ভোট বা এ তিনটি উপায়ে সমন্বিত ভোট সব ধরনের পদ্ধতিই রয়েছে অঙ্গরাজ্যগুলোয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পরিবারের যত দ্রুত সম্ভব ভোট দিয়ে ফেলা পারিবারিক ঐতিহ্য বলেও বিবেচিত হয়।
আর্লিংটনে নিক ভুকিক ও তাঁর স্ত্রী বেকা তিন মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ভোট দিতে। ৩৮ বছর বয়সী ভুকিক বলেন, ‘আমরা মেয়েদের যত দ্রুত সম্ভব ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে চাই।’
গত তিন মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে নাটকীয় নানা ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে গিয়ে কমলা হ্যারিসকে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেওয়ার ঘটনাটি সবার নজর কাড়ে। এ ছাড়া দুবার ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া টেলিভিশন বিতর্ক ঘিরেও দুই প্রচারশিবিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
আর্লিংটনে ৭১ বছর বয়সী আন স্পাইকার বলেন, ‘আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেছে নিতে পারি, তা বিশ্বাস করি না। আমি এ নিয়ে যখন ভাবি, তখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।’
কিন্তু এখান থেকে এক ঘণ্টার পর ওয়াশিংটনের পশ্চিমে ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের কিছু ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি আলাদা। সেখানকার ৫৮ বছর বয়সী আর্থার স্টুয়ার্ট নামের এক টেকনিশিয়ান বলেন, তিনি ট্রাম্পকে আবার হোয়াইট হাউসে ফেরাতে তাঁর ভোট দিয়েছেন। স্টুয়ার্ট বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অর্থনীতিতে একটি রেকর্ড রয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি যে তিনি এটি চালিয়ে যাবেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সীমান্ত। সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি খুবই ভালো।
স্টুয়ার্ট ট্রাম্পের ভিত্তিহীন দাবির প্রতিধ্বনি করে বলেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ট্রাম্পের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি আগাম ভোট দিয়ে এটা নিশ্চিত করতে চাইছি যাতে এবার ভোট জালিয়াতির মতো কোনো ঘটনা না ঘটে।’
কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট শুরু হলেও গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো ঘিরে দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা। জর্জিয়ার আটলান্টায় শুক্রবার নির্বাচনী সমাবেশ করেন কমলা। সমাবেশটিতে মূলত নারী সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন কমলা।
রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর দল গর্ভপাত নিয়ে ‘ভণ্ডামি’ করছেন বলে অভিযোগ কমলা হ্যারিসের।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের চেয়ে তিন গুণ বেশি খরচ করছেন কমলা। গত আগস্ট মাসে কমলা ১৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছেন। ট্রাম্পের খরচ সেখানে ৬ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। এসব খরচ মূলত বিজ্ঞাপন, সমাবেশ, যাতায়াত ও কর্মী-সমর্থকদের জন্য করা হয়। গত মাসে কমলার প্রচারশিবির সাড়ে ২৩ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করে, সেখানে ট্রাম্পের সংগ্রহ সাড়ে ১৩ কোটি।
Related
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!