১৭ই মার্চ,২০২৪ ইং,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী। শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুন দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে ৩য় সন্তান হলেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন,রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আমরা কমবেশি অবগত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করে আমার মনে হয়েছে ৩টা কারণে তিনি সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন।
১. দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা
২. উজাড় করে মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জন করার ক্ষমতা।
৩. ব্যাক্তিত্ব।
দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা:- ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে আসেন। তারপর থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তবে মনে করে নিতে পারেন বঙ্গবন্ধু তখনি আজকের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং আস্তে আস্তে সাধারণ ছাত্রদের মাধ্যমে তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। সাধারণ ছাত্রদের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল তুখোড় এক সিদ্ধান্ত। ইতিহাস বলে ছাত্ররা সবসময় সঠিক পথে হেঁটেছে যুগে যুগে।
উজাড় করে মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জন করার ক্ষমতা:- বঙ্গবন্ধুর জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মানুষকে ভালোবাসার এক অদ্ভুত ক্ষমতা তার মধ্যে বিরাজমান ছিল যা শৈশব থেকেই পরিলক্ষিত হয়। তিনি নিজ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শৈশবেই। ১৯৪৬ সালে কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। সেই সময়ের ছাত্ররাজনীতিতে যোগ্য এবং জনপ্রিয়তার প্রচলন ছিল বহুল। যোগ্য থেকে যোগ্যতর ব্যক্তিরাই তখন ছাত্র সংসদে জয়ী হতেন।
১৯৪৮সাল থেকে ভাষার দাবিতে সারাদেশে যে আন্দোলন জন্ম নেয় সেটির চূড়ান্ত রুপ নেয় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকেই পাকিস্তান সরকার দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। ১৪ই ফেব্রুয়ারী থেকে তিনি কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু সহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে উত্তাল হতে থাকে ঢাকার রাজপথ। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়ে সেই আন্দোলন চূড়ান্ত ফলাফল পাকিস্তান সরকার সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে দিয়ে দেয় এবং অর্জিত হয় কাঙ্খিত লক্ষ্য। পাকিস্তান সরকার সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।
ব্যাক্তিত্ব:- বাংলার ইতিহাসে বহু বাঘা বাঘা নেতার জন্ম হয়। শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সহ যুগে যুগে বহু নেতার জন্ম হয়েছে এই বাংলায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাক্তিত্ব ছিল সবার চাইতে আলাদা। ১৯৭১ বছরের পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়ানো জাতিকে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ঠিক এই জায়গাটিতেই বঙ্গবন্ধু সবার চাইতে আলাদা। অন্যরা বঙ্গবন্ধু থেকে অধিকতর যোগ্য নেতৃত্ব হলেও একটি জাতিকে এক সুতোয় গাঁথতে পারেননি এবং স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর করে তুলতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধু পেরেছিলেন ৭কোটি মানুষকে এক এবং অভিষ্ঠ লক্ষ্য “স্বাধীনতা”র পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে ১৮মিনিটের যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন সেই ভাষণে তিনি ২৪ বছরের নির্মম ইতিহাস ফুটিয়ে তুলে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। তিনি সরাসরি কিছু না বললেও মুক্তিকামী বাঙালি বুঝে নিয়েছিলো তাদের করনীয়। ৭ই মার্চ যদি তিনি সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতেন তাহলে সেই ঘোষণা হয়ে যেত রাষ্ট্রদ্রোহিতা। বহির্বিশ্বের কাছে আমরা হয়ে যেতাম কুলাঙ্গার জাতি এবং পাকিস্তানি বাহিনী সেই সমাবেশের মধ্যে সরাসরি আক্রমণ করে হয়ত ১০লক্ষ মানুষকে নিমিষেই হত্যা করে ফেলতো।
বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব, বিচক্ষণতা আর দূরদর্শিতার ফসল হচ্ছে ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের ভূখণ্ড, একটি লাল-সবুজের পতাকা এবং ১৯৭০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়ানো জাতির কাঙ্ক্ষিত সেই ” স্বাধীনতা”।
এজন্যই “বাঙালির মহাকালের মহানায়কের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান”।
জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা হে বঙ্গবন্ধু।
সাবেক দপ্তর বিষয়ক উপ-সম্পাদক,
কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ।
বিবেকানন্দ রায়
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!