কুমিল্লার গোমতী চরের কৃষকরা আকস্মিক বন্যায় সব হারিয়েও পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে নানা ধরনের সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইছেন তারা।
সম্প্রতি বুড়িচং এলাকার ষোলনল, গোবিন্দপুর, গোসাইপুর, কিং বাজেহুড়া ও আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা শীতকালীন সবজি রোপণ ও মাটি চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ট্রাক দিয়ে মাটি চাষ করছেন, আবার কেউ কোদাল নিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করছেন। এসব জমিতে ফুলকপি, বাঁধা কপি, মুলা, করলা, চিচিঙ্গা, টমেটো, পালংশাক, ডাটা শাক ও লালশাকের চারা রোপণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের চারা গজিয়ে উঠেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গোমতীর চরের ৩,০০০ হেক্টর জমিতে ফসল চাষ করে কৃষকরা জীবনধারণ করেন। তবে এবারের বন্যায় তাদের অনেক জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “গত কয়েক মাসে বাজারে সবজির দাম চড়া ছিল। বন্যা বা অতিবৃষ্টি না হলে আমাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে যেত এবং আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতাম।”
কিং বাজেহড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, “বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। তবে আশাবাদী, শিগগিরই কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে।” তিনি আরো বলেন, “অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে সবজি চাষ করেছেন, কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার মতো অর্থ নেই। তাই সীমিতভাবে নিজেদের চাষ করতে হচ্ছে।”
জগৎপুর গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম বলেন, “অতিরিক্ত খরচ করে সবজি চাষ করতে হচ্ছে। আগামীতে ফলন আসলেও সবজির দামে প্রভাব পড়বে বলে আমার ধারণা।”
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, “গোমতীর তীরবর্তী এলাকায় এবারের বন্যা ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি এবং বিভিন্ন সার ও কীটনাশক সরবরাহ করব।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আইয়ূব মাহমুদ বলেন, “বন্যার পানি নেমে গেলেও কিছু জমির মাটি এখনও চাষ উপযোগী হয়নি। নিচু জমির মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে শীতের সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকরা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।”
গত ২২ আগস্ট, মধ্যরাতে বুড়িচংয়ের বড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে যায়, যার ফলে আশপাশের খাড়াতাইয়া, নানুয়ারবাজার, গোপীনাথপুর, শিকারপুর, গোসাইপুর, কিং বাজেহুড়া ও জগৎপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম তলিয়ে যায়। এ দুর্যোগে জেলার ১৪টি উপজেলাবাসী কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অবশেষে, এই পরিস্থিতিতেও কৃষকদের স্থিরতা ও প্রত্যয়ের প্রদর্শন, তাদের জীবিকার জন্য নতুন করে চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করে। আশা করা হচ্ছে, তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল শীঘ্রই দেখা যাবে।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!