রবিবার (০৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে রিটার্নি কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের সব আসনের মনোনয়ন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করেন।
তিনি জানান যে, কিশোরগঞ্জে তিনটি আসনের ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ-০১ (সদর-হোসেনপুর)
আজ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-০১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই হয়। এই আসনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামের সমর্থনকারীর মধ্যে মৃত ব্যক্তির পক্ষে তাঁর ছেলে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। যাচাই-বাছাই কমিটি এটি আমলে নিয়ে মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন।
এ বিষয়ে সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘অদৃশ্য কারণে আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। আমি আপিল করব।’
এ ছাড়া এই আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস দল থেকে দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে দল থেকে মনোনয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আবুল কাশেমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ সাদীর সমর্থনকারীর মধ্যে ছয়জনের তথ্য ভুল থাকায় তাঁরও মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়। এ ছাড়া এই আসনে তিনজন প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ-০২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী)
এই আসনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা এবং সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন ও ঋণখেলাপি থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন যাচাই-বাছাই কমিটি।
তিনি জানান, হলফনামায় মামলার তথ্য ও ব্যাংক ঋণের তথ্য গোপন করায় আখতারুজ্জামান রঞ্জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আখতারুজ্জামান রঞ্জন জানান, আমি সরকারের সঙ্গে আঁতাত করিনি। সরকারি হালুয়া রুটির জন্য প্রার্থী হইনি সেটি আজ প্রমাণিত হয়েছে। বিস্তারিত দেখে আপিল করবো কিনা জানাবো।
এছাড়া এই আসনে হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করায় গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী আশরাফ আলী এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আহসান উল্লাহর প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এ আসনে মীর আবু তৈয়ব মো. রেজাউল করিম (গণফ্রন্ট), অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন (স্বতন্ত্র), আলেয়া (এনপিপি), মো. আব্দুল কাহার আকন্দ (আওয়ামী লীগ) ও মো. বিল্লাল হোসেন (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট) নির্বাচনে অংশ নিবেন।
কিশোরগঞ্জ-০৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, নির্বাচনী হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করায় এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও জানান, মামলার তথ্য গোপন করায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত তার মনোনয়নপত্র স্থগিত রাখা হয়। এসময়ের মধ্যে সংশোধন না করতে পারায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
মনোনয়ন বাতিলের বিষয়ে জানতে নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এই আসনের এক ভাগ ভোটারের সইয়ে গড়মিল থাকায় স্বতন্ত্রপ্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের সমর্থনকারীর মধ্যে ৯ জন সমর্থন না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে শামীম আহমেদ বলেন, ‘একটা পক্ষ ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার পক্ষে স্বাক্ষর করা ৯ জনকে আমার বিপক্ষে বলিয়েছেন। আমি আপিল করব।’
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রুবেল মিয়ার সমর্থনকারীর মধ্যে একজনের স্বাক্ষর না মিলায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার গোলাম কবির ভূঁইয়ার সমর্থনকারীর ছয়জনের স্বাক্ষর আছে; কিন্তু সমর্থন করেন নাই বিধায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এদিকে এই আসনে একজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনের (১, ২ ও ৩) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয়। এই তিনটি আসনে মোট ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৩০টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ২০টি গৃহীত হয়। এর মধ্যে ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এছাড়া তথ্যগত ছোটখাট ভুল থাকায় কিশোরগঞ্জ-০১ আসনে তিনজন ও কিশোরগঞ্জ-০৩ আসনে একজন প্রার্থীর মনোনয়ন রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। সোমবার জেলার বাকি তিনটি আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন কারণে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল এবং চারজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে। যাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ও স্থগিত হয়েছে, তাঁদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!