রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ১৬তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বৈশ্বিক সংঘাত ও জাতিসংঘের সংস্কার নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে ১৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ দিক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার।
ব্রিকস নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে জানিয়েছেন, “আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ এর সংস্কারের প্রতি আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি, যাতে এটি আরও গণতান্ত্রিক, প্রতিনিধিত্বমূলক এবং কার্যকর হয়ে ওঠে।” তারা উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিত্বের সম্প্রসারণের বিষয়েও জোর দেন, যাতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও কার্যকরী সাড়া দেওয়া যায়।
শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন গঠনের দাবি জানানো হয়। ব্রিকস নেতৃবৃন্দ বৈশ্বিক সংঘাতের ক্ষেত্রে কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের গুরুত্বের ওপরও আলোকপাত করেন। বিশেষ করে গাজা উপত্যকায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।
নেতৃবৃন্দ ১৯৬৭ সালের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব এবং জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ সমর্থন করেন। ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিকস নেতৃবৃন্দ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিরোধ এবং মহাকাশ নিরাপত্তার নিশ্চিতে একটি দলিল তৈরির আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভূমিকাকে শক্তিশালী করতে এবং ন্যায়সঙ্গত পরিস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাবও রাখা হয়।
ব্রিকস নেতারা আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন, যাতে এটি বৈশ্বিক আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে।
সভার অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতাদের উপস্থিতি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন।
সন্ধ্যায় সম্মেলনের সম্মানে একটি জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, সদস্য দেশগুলো রাশিয়ার প্রস্তাবিত ব্রিকস শস্য বিনিময় গড়ার বিষয়ে সমর্থন জানায়, যা পরবর্তীতে অন্যান্য কৃষি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রিকস নেতৃবৃন্দের এই সম্মেলন বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করেছে, যা বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
Subscribe
Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!